বগুড়ার সাত আসনে নৌকার হয়ে লড়বেন যারা

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। রোববার দুপুরে বগুড়ার সাত আসনে নৌকার কাণ্ডারিদের নাম ঘোষণা করেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এদিন বগুড়া-১ আসনে সাহাদারা মান্নান, বগুড়া-২ আসনে তৌহিদুর রহমান মানিক, বগুড়া-৩ আসনে সিরাজুল ইসলাম খান রাজু, বগুড়া-৪ আসনে হেলাল কবিরাজ, বগুড়া-৫ আসনে মজিবর রহমান মজনু, বগুড়া-৬ আসনে রাগেবুল আহসান রিপু এবং বগুড়া-৭ আসনে ডা. মোস্তফা আলম নান্নুকে মনোনয়ন দিয়েছে আওয়ামী লীগ। এর আগে বগুড়ায় সাত আসনে নৌকার মনোনীত প্রার্থী হওয়ার প্রত্যাশায় দল থেকে ৫৩ জন মনোনয়ন সংগ্রহ করেছিলেন। এদের মধ্যে যাচাইবাছাই শেষে সাতজনকে চূড়ান্ত করা হয়।
বগুড়ার-১ (সারিকান্দি-সোনাতলা) আসনে মনোনীত প্রার্থী হয়েছেন সাহাদারা মান্নান। আসনটিতে আমৃত্যু সংসদ সদস্য ছিলেন তার স্বামী আব্দুল মান্নান। তিনি আওয়ামী লীগের হয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়ে ২০০৮ সালে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। এরপর ২০১৪ ও ২০১৮ সালেও এমপি নির্বাচিত হন তিনি। পরবর্তীতে ২০২০ সালের ১৮ জানুয়ারি ঢাকার ল্যাবএইড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান আব্দুল মান্নান। এরপর আসনটিতে উপনির্বাচনের মাধ্যমে সংসদ সদস্য হিসেবে স্বামীর স্থানে আসেন সাহাদারা মান্নান। এর আগে থেকেই সাহাদারা মান্নান আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তিনি সারিয়াকান্দি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্বও পালন করেছেন। 
আসনটিতে মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৫৫ হাজার ১০৯ জন। ভোটকেন্দ্র ১২৪টি। 
বগুড়া-২ (শিবগঞ্জ) আসনে নৌকার মাঝি হিসেবে মনোনীত হয়েছেন তৌহিদুর রহমান মানিক। তিনি বিগত সময়ে শিবগঞ্জ পৌরসভার পরপর দুবার মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। এ ছাড়াও তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন।  বিগত সময়ে ২০১৪ সালে আসনটি আওয়ামী লীগের জোটের শরীক জাতীয় পার্টির হাতে ছেড়ে দেয়া ছিল। সে সময় আসনটিতে সংসদ সদস্য হন জাতীয় পার্টির নেতা শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ। পরবর্তীতে ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও শরিফুল ইসলাম সংসদ সদস্য হন।
এই আসনটিতে ৩ লাখ ২৬ হাজার ১৮৬ জনভোটার রয়েছেন। আর ভোটকেন্দ্র রয়েছে ১১০টি। বগুড়া-৩ আসনে এবার নৌকা নিয়ে লড়ার দায়িত্ব পেয়েছেন সিরাজুল ইসলাম খান রাজু। ২৭ বছর আদমদীঘি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছিলেন তিনি। পরবর্তীতে গত ১০ বছর ধরে উপজেলা চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছিলেন তিনি। এ ছাড়া ২০২০ সাল থেকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্বেও আছেন সিরাজুল ইসলাম। এর আগে ২০০৮ সালে সাবেক বানিজ্য মন্ত্রী আব্দুল জলিলের হাতে ফুলের তোড়া দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে যোগদান করেন।
আসনটিতে ২০১৪ ও ২০১৮ সালে আওয়ামী লীগের জোটের শরীক জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য নুরুল ইসলাম তালুকদার দায়িত্বে ছিলেন। 
আসনটিতে মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ২২ হাজার ১৬৭ জন। ভোটকেন্দ্র থাকবে ১১৭টি।  
১৯৮৬ সালে সীমানা পরিবর্তন করে কাহালু ও নন্দীগ্রাম দুই উপজেলা নিয়ে বগুড়া-৪ আসন গঠন করা হয়। গত দুই দশক ধরে আসনটিতে আওয়ামী লীগ প্রার্থী বঞ্চিত হয়ে আছে। তাদের হয়ে জোটের অন্য শরিক জাসদের বগুড়া জেলা শাখার সভাপতি রেজাউল করিম তানসেন নির্বাচন করেন বিগত সময়ে। কিন্তু খুব একটা ভালো করতে পারেননি। শুধু ২০১৪ সালে বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নেয়ায় ভোটে জয়লাভ করেন তিনি। কিন্তু পরবর্তী ২০১৮ সালে নির্বাচনে ধানের শীষের প্রার্থী মোশারফের কাছে হেরে যান তানসেন। 
আসন্ন দ্বাদশ নির্বাচনে আসনটির মনোনীত প্রার্থী হলেন কাহালু উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হেলাল কবিরাজ। তিনি কাহালু পৌরসভার সাবেক মেয়র।
এ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৪৪ হাজার ৫১৪। মোট ভোট কেন্দ্র ১১৪টি। 
বগুড়া-৫ আসনে এবার একটু চমক দেখা গেছে। ২০০৮ সাল থেকে নিয়মিত নির্বাচিত হয়ে আসা আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ও সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা হাবিবর রহমানকে এবার পরিবর্তন করা হয়েছে। তার পরিবর্তে আসনটিতে এবার নৌকার মাঝি করা হয়েছে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও শেরপুর উপজেলা চেয়ারম্যান মজিবর রহমান মজনুকে। তিনি দীর্ঘদিন বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। পরবর্তীতে বগুড়ার আওয়ামী লীগের প্রবীন নেতা মমতাজউদ্দিনের মৃত্যুর পর ২০১৯ সালে মজিবর রহমান মজনু সভাপতি হন। তিনি বর্তমানে শেরপুর উপজেলা চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন।
বগুড়া-৫ আসনটিতে মোট ৫ লাখ ৪০ হাজার ৬৮ জন। ভোটকেন্দ্র রয়েছে ১৮৮টি।  
বিএনপির নিজের ঘরের আসন হিসেবে স্বীকৃত বগুড়া-৬ আসনে চলতি বছরে ফেব্রুয়ারিতে রাগেবুল আহসান রিপু নৌকা প্রতীকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। দ্বাদশ নির্বাচনেও ফের তাকেই মনোনীত করেছে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ। 
১৯৭৯ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত সব কটি জাতীয় নির্বাচনে বগুড়া-৬ আসনে জিতেছে বিএনপি। ২০১৪ সালে বিএনপি আগেই ভোট বর্জন করেছিল। আর ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির মির্জা ফখরুলের প্রাপ্ত ভোটের হার ৫৩ দশমিক ১৯ শতাংশ। এই নির্বাচনে শপথ না নেয়ায় ২০১৯ সালে আবার বগুড়া-৬ আসনে উপনির্বাচন দেয়া হয়। সেই নির্বাচনে ধানের শীষের হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করে জয় পান গোলাম মো. সিরাজ। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন নৌকা প্রতীকের টি জামান নিকেতা। পরবর্তীতে বিএনপির নেতারা সংসদ বর্জন করলে আসনটিতে আবার উপনির্বাচনের ঘোষণা দেয়া হয়। এ বছরের ১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ভোটে বগুড়া ৬ (সদর) আসনে নৌকা প্রতীক নিয়ে রাগেবুল আহসান রিপু ৪৯ হাজার ৩৩৬ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন।
বগুড়া-৬ আসনে মোট ভোটার ৪ লাখ ২৮ হাজার ৪২। ভোটকেন্দ্র ১৪৪টি। 
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়ার বাড়ি খ্যাত বগুড়া-৭ আসনটিতেও বিগত সময়ে জোটের শরীক জাতীয় পার্টির মনোনীত ব্যক্তি সংসদ সদস্য ছিলেন। এবার আসনটিতে নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন পান  ডা. মোস্তফা আলম নান্নু। 
ডা. মোস্তফা আলম রাজশাহী মেডিকেল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়ালেখা শেষ করেন। তিনি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের দুবার সিনেট সদস্য ছিলেন। এ ছাড়া বিএমএর বগুড়া জেলা সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। এর আগে বগুড়া জেলা স্বাচিপের সাবেক সভাপতি ছিলেন। 
২০০৮ সালে বগুড়ার ৬, ৭ ও ফেনী-১ আসনে জয়ী হয়েছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। কিন্তু দুটি বেছে নেয়ার কারণে বগুড়া-৭ আসনটি শূন্য হয়ে পড়ে। এজন্য ২০০৯ সালে আসনটিতে উপনির্বাচন হয়। ওই নির্বাচনে বিএনপির মওদুদ আহমেদের বিপরীতে নৌকা নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেছিলেন মোস্তফা আলম নান্নু। 
এই আসনের মোট ভোটার ৫ লাখ ১২ হাজার ২৫৮। আর কেন্দ্র আছে ১৭২টি। 
নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী- নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ৩০ নভেম্বর, বাছাই ১ থেকে ৪ ডিসেম্বর, রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল ও শুনানি ৬-১৫ ডিসেম্বর এবং ১৭ ডিসেম্বরের মধ্যে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করা যাবে। প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হবে ১৮ ডিসেম্বর। নির্বাচনী প্রচারণা চলবে ১৮ ডিসেম্বর থেকে ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত। ব্যালট পেপারে ভোটগ্রহণ হবে ৭ জানুয়ারি সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত।

বিজ্ঞাপন