ভরা মৌসুমেও বগুড়ায় আগুন ছড়াচ্ছে মরিচ

ছবি- প্রতিনিধি

মরিচের বাজারে আগুনের দেখা মিলে। খুচরা বাজারে কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে সর্বোচ্চ ১৬০ টাকা কেজি দরে। আর শুকনো মরিচ ছয় হাজার টাকায়। দামের এমন দামের পরিস্থিতি নিয়ে কোনো ধারণা নেই ক্রেতাদের, শুধু আছে আক্ষেপ। শুধু মরিচের বাজার যে গরম তা নয়। বাজারের প্রায় সব পণ্যের উর্দ্ধমুখী দামে হিমশিম খাচ্ছে সব শ্রেণির ভোক্তারা। বগুড়ার কয়েকটি বাজার ঘুরে এমন পরিস্থিতি দেখা যায়। 
রহমান নগরের বাসিন্দা ও বেসরকারি চাকরিজীবী মিজানুর বলেন, ‘আমি তো দূরেই থাকলাম, বাবা-মা বলছিলেন শুকনো মরিচের এত দাম কখনও দেখেননি। শুধু শুকনোতে না দাম তো বাড়ছে কাঁচা মরিচেও। কেন এমন দাম তার কোনো কারণও বোঝা যায় না।’   

একশ গ্রাম শুকনো মরিচ কিনলাম ৬০ টাকা দিয়ে। অবাক হওয়ার চেয়ে হতাশ হয়েছি। বগুড়ার মানুষ হয়ে এত টাকা দিয়ে মরিচ কিনতে হচ্ছে। আক্ষেপ নিয়ে এ কথা বলছিলেন বগুড়া শহরের সাতমাথায় দাঁড়িয়ে মিজানুর রহমান। তার কথা অনুযায়ী শুক্রবার বাসার সামনে থেকে ভ্যানের ওপর থেকে কাঁচা মরিচ ক্রয় করেন শহরের চেলোপাড়া এলাকা গৃহিণী শামিমা আক্তার। তিনি জানান, এক পোয়া মরিচ কিনেছি ৪০ টাকা দরে। গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই এমন দাম দেখছি। বাজারে গেলে হয়তো হয়তো ৫ টাকা কম পেতাম। কিন্তু  শুধু মরিচ নিতে বাজারে যাওয়া কী আর সম্ভব হয়। 


পাইকারি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত বছরের ডিসেম্বরের শেষের দিকে শৈত্যপ্রবাহ দেখা দেয়। সেই সময় বাজারে মরিচের আমদানি কমে যায়। ফলে দামও বাড়তে থাকে। এখনকার বাজারে প্রতিকেজি শুকনো মরিচ তারা বিক্রি করছেন ৪৫০-৫০০ টাকা। কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১২০-১৪০ টাকা।  
বগুড়া শহরের রাজা বাজারের শুকনো মরিচের পাইকারি ব্যবসায়ী আব্দুল মজিদ বলেন, বাজারে কাঁচা মরিচের দাম অনেক বেশি। এ কারণে কৃষকরা মরিচ শুকাচ্ছেন না। তারা মাঠ থেকেই কাঁচা মরিচ বিক্রি করে দিচ্ছেন। শুকনো মরিচের চেয়ে কাঁচাতেই তারা লাভ বেশি পাচ্ছেন। ফলে আমরাও দেশি শুকনো মরিচ পাচ্ছি না।
একই বাজারের আরেক পাইকারী ব্যবসায়ী আলামিন জানান, এখন মরিচের আমদানি কম। এটার কারণে দামের তারতম্য।
কৃষক পর্যায়ে খোঁজ নিয়ে মরিচের এমন পরিস্থিতি জানা যায়। কৃষক ও মরিচ ব্যবসায়ী বগুড়ার সারিয়াকান্দির চরবাটিয়ার মোহাম্মদ শাহিন গত এক যুগেও এমন দাম বাড়তে দেখেননি। তিনি জানান, এখন তো মরিচের ভরা মৌসুম। এই সময়ে শুকনো মরিচের দাম প্রায় ১৬ হাজার টাকা মণ। অথচ গত বছর একই সময়ে এই দাম ছিল সর্বোচ্চ ৭ হাজার টাকা। এবার কাঁচা মরিচেরও দাম বেশি। মাঠ থেকেই বিক্রি হচ্ছে প্রতি মণ তিন হাজার টাকা।
মরিচ চাষী শাহিন বলেন, ‘৫ মণ মরিচ শুকিয়ে হয় এক মণ। এতে সময়, শ্রম দুটোই অনেক লাগে। কোন কৃষক আর কষ্ট করবে? তারা মাঠেই কাঁচা মরিচ বিক্রি করছেন। ‘
এতো গেল মরিচের কথা। বাজারের অন্য পণ্যের দামও উর্দ্ধমূখী। এর মধ্যে শীতকালীন সবজির দাম বেশি হলেও অনেকদিন ধরে তা স্থির আছে। অস্থির বাজার দেখা গেছে মুরগি ও ডিমের। হঠাৎ করেই এসবের দাম বেড়েছে। ক্রেতাদের ভাষায়, বাজারে এলে পকেট শূণ্য হওয়া ছাড়া উপায় নেই।
খুচরা বাজারে প্রতি কেজি আলু ৩০-৪০ টাকা, পেঁয়াজ ৩৫, আদা ১২০, রসুন ১৬০, বেগুন ৫০, মিষ্টি কুমড়া ৪০, টমেটো ও গাজর ৩০, ফুলকপি ও বাঁধাকপি ২০, শিম ৪০-৬০ ও মটরশুটি ৮০ টাকা। 
ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজি ২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর সোনালী ও লেয়ার মুরগি বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ২৯০ টাকা। মুরগির ডিম প্রতি হালি ৩ টাকা বেড়ে হয়েছে ৪৮ টাকা। হাঁসের ডিম বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়। 
কলোনী বাজারে আসা আরিফুল ইসলাম নামে এক ক্রেতা বলেন, এখন বাজারে আসতে একটু ভয় করে। দাম বৃদ্ধিতে আমাদের নাভিশ^াস উঠেছে ভাই। খাওয়া লাগে তাই বাজারে আসতে হয়। 
মুরগির দাম বাড়ার কারণ সম্পর্কে কলোনী বাজারের ব্যবসায়ী লিমন জানান, পোল্ট্রি খাদ্যের দাম বাড়ছে। তাই আমরা বেশি দামে মুরগি কিনছি, বেচতেও হচ্ছে বেশি দামে। আমরা শুনছি এই দাম আরও বাড়বে।     
রাজাবাজার আড়তদার ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক পরিমল প্রসাদ রাজ বলেন, আমদানি কম থাকায় নিত্য প্রয়োজনীয় পন্যের যোগান কমেছে। ফলে সব কিছুরই দাম বাড়ছে। মরিচেরও একই অবস্থা। জেলায় মাসে অন্তত ৬০ টন শুকনো মরিচ কেনাবেচা হয়। কিন্তু ভারত থেকে শুকনো মরিচ আমদানি কমে গেছে। এ কারণে দেশীয় মরিচের ওপর চাপ বেশি। 
দ্রব্যমূল্যের ওঠানামায় ক্রেতাদের দুরাবস্থার পাশাপাশি বিক্রেতারা বেশ সংকটে আছে বলে জানান এই ব্যবসায়ী নেতা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিপ্তরের তথ্যমতে, বন্যার কারণে বগুড়ায় মরিচ চাষে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি। ৭ হাজার ১০০ হেক্টর লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আবাদ হয়েছে ৫ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমি। শুকনো মরিচ আকারে এতে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় প্রায় ১৮ হাজার ৬০০ মেট্রিক টন।
দপ্তরটির উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা ফরিদুর রহমান জানান, গত বছর বর্ষা মৌসুমের শেষের দিকে হয়ে যাওয়া বন্যায় বেশ কিছু ফসল নষ্ট হয়। এর মধ্যে মরিচ একটি। পরবর্তীতে কৃষক সেই জমিতে অন্য ফসল করে। কিন্তু মরিচের আবাদ কমে যায়।

বিজ্ঞাপন