সাকিব-তামিম দ্বন্দ্বই কি বাংলাদেশের বিশ্বকাপের দল ঠিক করে দিচ্ছে?

ব্যাটসম্যানের রান কেমন, ফর্ম কেমন, বোলারের ছন্দ কেমন, ম্যাচ ধরে ধরে দলের চাহিদার সঙ্গে কে কেমন যাবেন...একটা বিশ্বকাপের দল গড়ার ক্ষেত্রে এসবই তো একমাত্র বিবেচ্য হওয়া উচিৎ। কিন্তু সবকিছু স্বাভাবিক নিয়ম মেনেই হলে দলটার নাম আর বাংলাদেশ কেন! অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, ওসব নয়, বাংলাদেশের বিশ্বকাপের দল গড়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় প্রভাবক হয়ে উঠছে সাকিব আল হাসান আর তামিম ইকবালের দ্বন্দ্ব!
বিসিবি আনুষ্ঠানিকভাবে দল ঘোষণা এখনো করেনি, তবে বাতাসে জোর গুঞ্জন, তামিমকে বাদ দিয়েই বিশ্বকাপের দল সাজাচ্ছে বাংলাদেশ। কারণ, তামিম পুরোপুরি ফিট নন। এবং পুরোপুরি ফিট নন - এমন কাউকে দলে চান না বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিব আল হাসান ও কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে।
শুনতে খুবই ভালো শোনায়, ফিট না হলে কারও দলে থাকা উচিৎও নয়। এর আগে ২০১১ সালে ঘরের মাঠের বিশ্বকাপে মাশরাফি বিন মুর্তজাকে বাংলাদেশ দলে নেয়নি চোটের কারণে, গত বিশ্বকাপে তাসকিন আহমেদও বাদ পড়েছিলেন সে কারণে। কিন্তু এবার বাদ পড়া খেলোয়াড়ের নাম তামিম এবং তাঁকে দলে না চাওয়া অধিনায়কের নাম সাকিব আর দুজনের অতীতের ‘বন্ধু যখন শত্রু’ সম্পর্কের ইতিহাসই প্রশ্ন তুলে দেয় – ডাল মে কুছ কালো নেই তো!
প্রশ্নটা আরও জোরাল হয়, যখন শোনা যায়, তাঁদের আপত্তি সত্ত্বেও তামিমকে দলে নিলে সাকিব নাকি বিশ্বকাপে অধিনায়কত্ব করবেন না বলেও জানিয়ে দিয়েছেন! নাকি বলা ভালো, হুমকি দিয়ে রেখেছেন? গতকাল রাতে এ নিয়ে আলোচনা করতে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের বাসায়ও গেছেন সাকিব ও হাথুরুসিংহে।
তামিমের না থাকার গুঞ্জনের মধ্যে দল ছাড়লেন নাফীস ইকবালওতামিমের না থাকার গুঞ্জনের মধ্যে দল ছাড়লেন নাফীস
এর মধ্যে গুঞ্জনের পালে বাতাস দিচ্ছে আরেকটি খবর, সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা আজ বিসিবিতে গেছেন, নাজমুল হাসান পাপনের সঙ্গে কথাবার্তাও বলেছেন। মাশরাফি যদিও বলছেন, ব্যক্তিগত কাজেই তিনি গেছেন বিসিবিতে। কিন্তু বাংলাদেশের ক্রিকেটবিষয়ক কিছুতে মাশরাফিকে সর্বশেষ এত ‘অ্যাকটিভ’ কবে দেখা গেছে মনে আছে তো? গত জুলাইয়ে তামিমের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নাটকের শেষ অঙ্কে, তামিমকে ফেরানোর ক্ষণে।
একদিকে যুক্তি, তামিম নিজেই বলেছেন, তিনি পুরোপুরি ফিট নন। তাঁর চোটও যেকোনো সময় ফিরে আসার ঝুঁকি আছে। সেক্ষেত্রে তাঁকে বিশ্বকাপের দলে নেয়ার কোনো মানে হয় না।
আরেকদিকে যুক্তিও কম যায় না। তামিম বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বে পাঁচটি ম্যাচ খেলার কথা আসলেই বলেছেন কি না, বা ম্যাচের কোনো নির্দিষ্ট সংখ্যা বেঁধে দিয়েছেন কি না, এ নিয়ে সংশয় আছে। তবে যদি তা বলেও থাকেন, সে ক্ষেত্রেও হিসাবটা এই যে, গ্রুপ পর্বে ৯টি ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ। সেখানে পাঁচটি ম্যাচেও যদি তামিম খেলতে পারেন, মন্দ কী? ওপেনিংয়ে তামিমের বিকল্প হয়ে ওঠার মতো সম্ভাবনা তো কেউ গত কিছুদিনে দেখাতে পারেননি! উল্টো লিটন দাসও ফর্ম হারিয়ে বসায় বাংলাদেশের ওপেনিং নিয়ে দুশ্চিন্তা আরও বেড়েছে। 
কারও মতে, তামিম আগে থেকে নিজেকে ‘পুরোপুরি ফিট নন’ জানিয়ে একটা অজুহাতের ক্ষেত্র তৈরি করে রাখছেন। যাতে বিশ্বকাপে তিনি ভালো করতে না পারলেও বলতে পারেন, তিনি তো আগেই বলেছিলেন তিনি ফিট নন। আবার সাকিবের নাকি ঘোর সংশয়, তামিম তাঁর অধিনায়কত্বে পুরোটা উজাড় করে দেবেন না।
এই যখন অবস্থা, বিসিবি দল ঘোষণার সময় প্রাথমিকভাবে বিকাল ৫টা ৪৫ মিনিট জানালেও সেটা পরে পিছিয়ে দিয়েছে। এতেও সংশয়বাদী মনে প্রশ্ন ওঠে, তার মানে কি কোনো ঝামেলার মিটমাটের চেষ্টা চলছে?
ওদিকে তামিমের বড় ভাই, সাবেক ওপেনার এবং বর্তমানে বাংলাদেশ দলের লজিস্টিক ম্যানেজার নাফীস ইকবালও নাকি আজ নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে তৃতীয় ওয়ানডের মাঝপথে ড্রেসিংরুম ছেড়ে চলে গেছেন। শোনা যাচ্ছে, সাকিব তাঁকেও দলের আশপাশে চান না।
এত গুঞ্জন, সবকিছুর কেন্দ্র সেই সাকিব-তামিম দ্বন্দ্ব। যা রটে, তার কতটা বটে?

বিজ্ঞাপন