মাজরা ও আতঙ্কে কয়রায় কৃষকরা, পরামর্শে অবহেলার অভিযোগ

কয়রা (খুলনা) প্রতিনিধি ঃ খুলনার কয়রা উপজেলায় চলতি বোরো মৌসুমে মাজরা ও বøাষ্ট রোগে আক্রান্ত শতশত বিঘা জমির ধান। কৃষকরা আতঙ্কে থাকলেও খবর নেই কৃষি অফিসের মাঠ পর্যায়ের উপসহকারি কর্মকর্তাদের। খবর নিয়ে জানা গেছে, বিভিন্ন ইউনিয়নে বোরো ধান ক্ষেতে ফলন মুখে ব্যাপকহারে রোগ বালাই দেখা দেয়। কিš‘ কৃষকরা অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার দ্বিগুণ হারে ঔষুধ প্রয়োগ করেও মাজড়ার আক্রমণ থেকে রক্ষা করতে পারিনি অনেক ধানক্ষেত। এছাড়া মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তারা কখনও এসব ধান চাষিদের খোঁজ খবর না নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। কয়রা সদর ইউনিয়নে ২ জন উপসহকারি কর্মকর্তা মাঠ পর্যায়ে দায়িত্ব থাকলেও এই ইউনিয়নের বেশিরভাগ কৃষক তাদের চেনেন না। অনুরুপ অন্যান্য ইউনিয়নেও ব্যাপকহারে মাজরায় অনেক ধানক্ষেত নষ্ট করলেও কৃষি কর্মকর্তারা কৃষকদের ক্ষেত পরিদর্শন না করার অভিযোগ উঠেছে। 
সরেজমিনে গিয়ে কয়রা ইউনিয়নের ২নং কয়রার মাঠে গিয়ে সালাম শেখ নামের কৃষকের সাথে কথা হলে তিনি জানান, আমি এ বছর ৪ বিঘা জমিতে বোরো ধান চাষ করেছি। অধিকাংশ জমিতে ছত্রাকের আক্রমনে ধান চিটা হয়ে গেছে এবং মাজরার আক্রমনে ধান গাছ কেটে দি”েছ। ১ বিঘা জমিতে মাজরার কীটনাশক প্রয়োগ করতে ২/৩ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। আবার কোন কোন জায়গায় পাতা পর্যন্ত মারা গেছে। অথচ এ ৪ মাস হলো ধান চাষ করেছি কৃষি অফিস থেকে কেউ এসে দেখেও না, পরামর্শও দেয় না। কোন ক্রমেই এসব ধানের জমিতে বার বার কীটনাশক/ বালাইনাশক ওষুধ দিয়েও কাজ হ”েছ না। বোরো চাষের আগে পরে কোন উপসহকারির পরামর্শ পায়নি অথচ আমি এই এলাকায় ৫ জন ভাল আবাদি কৃষক থাকলে তাদের মধ্যে একজন। 
একই মাঠে কথা হয় সংকর মন্ডল অভিযোগ করে বলেন, আমি ৩ বিঘা জমিতে বোরো চাষ করেছি। আমার অধিকাংশ জমিতেই ধান নষ্ট হয়ে যা”েছ। কৃষি অফিসের লোকজন অফিসে বসে থাকে। মাঠে কখনও তারা নামে না। এত কীটনাশক প্রয়োগ করলাম কিছুতেই কাজ হ”েছ না। 
মহসিন সানা অভিযোগ করে বলেন, এই যে মাঠ কে মাঠ ধান পোকার আক্রমনে নষ্ট হয়ে যা”েছ অথচ আমরা সঠিক কোন পরামর্শ পা”িছ না। কোন রকমের সভা সমাবেশ লিফলেট দিয়েও আমাদের পরামর্শ দেয়া হ”েছ না। এই মাঠে প্রায় ৪০০ বিঘার মত বোরো চাষ হয়েছে আমার বোরিং আছে যা দিয়ে প্রায় ৫০ বিঘা জমিতে পানি দেই কিš‘ এ পর্যন্ত একদিনও তো কৃষি অফিসের কেউ পরামর্শ দিতে আসেন নাই। শুনেছি আমাদের ইউনিয়নে ২ জন উপসহকারি আছে গুরুদাস ও অনুতাপ। তাদের সরকার বেতন দেয় মনে হয় অফিসে থাকতে। কেউ যদি অফিসে যায় তারা বলে ধানের কি সমস্যা তখন আমরা বলি ধান গাছ বসে যা”েছ, পাতা মরে যা”েছ তখন বলে অমুক দোকান থেকে একটা ওষুধ কিনে নিয়ে যান। মাঠে যাওয়ার কথা বললে বলে এ ওষুধ দাও ভাল হয়ে যাবে।
কয়রা সদর ইউনিয়নে ২, ৩ ও ৪ নং কয়রা গ্রামে একাধিক মাঠ ঘুরে দেখা গেছে শুধু মাত্র মাজরার কারনে কৃষকরা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হ”েছ। এবিষয় ৩নং কয়রা গ্রামের, আবুল হাসান, ২নং কয়রা আঃ সাত্তার, কামরুল শেখ সহ একাধিক চাষি জানান, তারা এই ইউনিয়নে কর্মরত কৃষি কর্মকর্তা বাবু গুরুদাস ও অনুতাপ মন্ডলকে কখনও দেখেনি এবং এমন দুজন অফিসার সরেজমিনে মাঠে তদারকি করেন তাও জানা নেই। এসব কৃষকরা আরও জানায়, তাদের অনেকেরে ধানক্ষেত আগুনে পোড়ার মত লাল হয়েছে, আবার অনেকের মাজরা পোকায় ক্ষতি করায় অর্ধেক ফসলও না পাওয়ার আশা করছেন। অনুরুপ মহারাজপুর গ্রামের কৃষক আঃ হক বলেন বোরো ধানে এ বছর মাজরায় এত আক্রমণ কিš‘ কৃষি অফিসের কোন উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তার কোন পরামর্শ পায়নি। উত্তরবেদকাশি, বাগালীও মহেশ^রীপুর ইউনিয়নে মাজরা পোকায় ব্যাপক ক্ষতি সাধনের খবর পাওয়া গেছে। 
এদিকে কয়রা সদর ইউনিয়নে দায়িত্বপ্রাপ্ত ২ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ করেছেন কৃষকরা। অভিযোগের বিষয় জানা গেছে, এই ২ কর্মকর্তা সারা বছর উপজেলা কৃষি অফিসে বসে অফিসের কাজ করেন। ফলে এই কর্মকর্তাদ¦য়ের সাথে অধিকাংশ কৃষকদের পরিচয় নেই।

এ বিষয় উপজেলা দয়িত্বপ্রাপ্ত কৃষি কর্মকর্তা অসীম কুমার দাস এর সাথে কথা বললে তিনি উক্ত দুই উপসহকারি কর্মকর্তার বিষয় সত্যতা স্বীকার করে বলেন, অফিসে জনবল কম থাকায় তারা অফিসিয়াল কাজ করে। তিনি বলেন, খুব শ্রীঘ্রই সকল উপসহকারি কর্মকর্তাদের নিজ নিজ ইউনিয়নের কর্ম¯’লে থাকতে হবে, সেজন্য তিনি অফিশিয়াল সিদ্ধান্ত নেবেন। এছাড়া ধান ফোলা মুখে মাজরার আক্রমণ কিছুটা কমেছে বলে একাধিক কৃষক তাকে জানিয়েছেন। তবে উপসহকারিদের অসহযোগিতার কারনে কৃষকরা যে ক্ষতিগ্র¯’ হয়েছে এ বিষয়ে তিনি এড়িয়ে যান।   
 

বিজ্ঞাপন