সম্পদে এগিয়ে খালেক, পিছিয়ে আউয়াল, মধুর বার্ষিক আয় বেশি

খালেক স্নাতক, মধু স্বশিক্ষিত, আউয়াল কামিল পাস

খুলনা: আসন্ন খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি) নির্বাচনে মেয়র প্রার্থীরা রিটার্নিং কর্মকর্তাদের কাছে স্ব-স্ব মনোনয়ন পত্র জমা দিয়েছেন। পত্রের সঙ্গে তারা নিজেদের শিক্ষাগত যোগ্যতা সম্পদ ও দায়-দেনার বিবরণীর হলফনামাও দিয়েছেন।
এসব হলফনামা থেকে দেখা গেছে বর্তমান মেয়র ও আওয়ামী লীগ মনোনীত আসন্ন নির্বাচনের মেয়রপ্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেকের শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতক পাস। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত মেয়রপ্রার্থী মো. আব্দুল আউয়াল কামিল পাস। তবে শিক্ষাগত যোগ্যতায় পিছিয়ে মো. শফিকুল ইসলাম মধু। নিজেকে স্বশিক্ষিত বলে হলফনামায় উল্লেখ করেছেন তিনি। যাচাই-বাছাই শেষে এ তিন প্রার্থীর মনোনয়ন বৈধ বলে ঘোষণা দিয়েছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আলাউদ্দীন।
প্রার্থীদের তথ্য বিবরণী ঘেঁটে দেখেছে বাংলানিউজে। বর্তমান মেয়র ও আওয়ামী লীগ মনোনীত আসন্ন নির্বাচনের মেয়রপ্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেকের হলফনামায় দেখা গেছে, নিজের পেশা ব্যবসা বলে উল্লেখ করেছেন তিনি। তার কাছে নগদ রয়েছে ৪ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। চারটি ব্যাংকে জমা আছে ১ কোটি ১৮ হাজার টাকা। ১০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র ও ১৮ লাখ টাকার পোস্টাল এফডিআর রয়েছে তার।
এ ছাড়া তার বাসার এসি, টিভি, ফ্রিজ ও ওভেনের মূল্য ৯ লাখ ৯০ হাজার টাকা। আসবাব রয়েছে ৭ লাখ টাকার। তা ছাড়া তালুকদার খালেক পৈতৃক সূত্রে ২৩ বিঘা কৃষিজমির মালিক। এ ছাড়া তার ৩ দশমিক ২১ একর কৃষিজমি ও ৩ কাঠা অ-কৃষি জমি রয়েছে। যার মোট মূল্য ২৮ লাখ ২১ হাজার টাকা। জমিসহ একটি বাড়ির অর্ধেক মালিক তিনি, যার মূল্য ২ কোটি ১২ লাখ টাকা। দুটি গাড়ির মধ্যে একটির মূল্য ৪৪ লাখ টাকা। একটি মাইক্রোর মূল্য দেখিয়েছেন ১৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা।
স্নাতক পাস তালুকদার খালেকের বিরুদ্ধে নয়টি মামলা ছিল। চারটিতে তিনি অব্যাহতি ও বাকি ৫টিতে খালাস পেয়েছেন। তার স্ত্রী পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপমন্ত্রী বেগম হাবিবুন নাহারের কাছে নগদ আছে ৭৩ লাখ ৬২ হাজার টাকা। চারটি ব্যাংকে তার জমা রয়েছে ৯৫ লাখ ৪ হাজার টাকা। সঞ্চয়পত্র রয়েছে ৫০ লাখ টাকার। টয়োটা ল্যান্ড ক্রুজার ব্যবহার করেন তিনি। সেটির দাম উল্লেখ করা হয়েছে ৭৬ লাখ ৯০ হাজার টাকা। বৈবাহিক সূত্রে পাওয়া ২৫ ভরি স্বর্ণের মালিক খালেকের স্ত্রী। এ ছাড়া স্যার ইকবাল রোডের সোনালী ব্যাংক শাখায় তালুকদার খালেক ও স্ত্রীর নামে ঋণ আছে ১ কোটি ৩৪ লাখ টাকা।
হাবিবুন নাহারের নামে রাজউক পূর্বাচল প্রকল্পে প্লট রয়েছে, যার মূল্য ২২ লাখ টাকা। এ ছাড়া জমিসহ পাঁচতলা আরেকটি বাড়ির অর্ধেকের মালিক তিনি, যার মূল্য দেখানো হয়েছে ৩১ লাখ টাকা।
এর আগে ২০১৮ সালে হলফনামায় পেশা হিসেবে কৃষিখাতকে ব্যবসা হিসেবে দেখিয়েছিলেন তালুকদার আবদুল খালেক। বার্ষিক আয় প্রায় ৪২ লাখ টাকা, দেনা নেই। ব্যাংক জমা, সঞ্চয়পত্র ও স্ত্রীর সম্পদের পরিমাণ ৫ কোটির কিছু বেশি।
কামিল পাস মো. আব্দুল আউয়াল কেসিসি নির্বাচনে লড়বেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মনোনয়নে। নিজের হলফ নামায় পেশা হিসেবে লিখেছেন জামি’আ রশীদিয়া গোয়ালখালী মাদরাসার অধ্যক্ষ এবং সাধারণ ব্যবসায়ী তিনি। ব্যবসা থেকে তার বার্ষিক আয় ১ লাখ ৩৫ হাজার; মাদরাসার শিক্ষকতা থেকে ১ লাখ ৯৬ হাজার টাকা। আউয়ালের নিজের নামে ৩ দশমিক ৫৭ শতক অ-কৃষি জমি। অস্থাবর সম্পদ আছে নগদ ৬ হাজার টাকা, ইলেকট্রনিকস সামগ্রীর মূল্য ১ লাখ ১৪ হাজার টাকা, আসবাবপত্রের মূল্য ৫০ হাজার টাকা, স্ত্রীর নামে ১৫ ভরি স্বর্ণ রয়েছে, যার মূল্য ১৪ লাখ ২৫ হাজার টাকা। তার নামে কোনো মামলা নেই।
আসন্ন নির্বাচনে জাতীয় পার্টি থেকে ভোটের লড়াই করবেন মো. শফিকুল ইসলাম মধু। তিনি অন্য দুই প্রার্থী থেকে শিক্ষা পিছিয়ে। হলফনামায় নিজেকে স্বশিক্ষিত বলে উল্লেখ করা মধুর পেশা প্রথম শ্রেণির সরকারি ঠিকাদারি। মহানগরীর সোনাডাঙ্গা আবাসিক এলাকায় ৪ কাঠা জমি ও চারতলা বাড়ি আছে তারা। টুটপাড়া মৌজায় ০ দশমিক ১৩৭২ ও ০ দশমিক ১২৪৪ একরের দুটি জমি রয়েছে; যার সর্বমোট মূল্য ২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। বাড়ি ভাড়া থেকে তার বছরে আয় ১ লাখ ৮৬ হাজার ও ঠিকাদারি ব্যবসা থেকে ৮৮ লাখ।
তার নগদ ও ব্যাংকে জমা ১ কোটি ৫২ লাখ টাকা, মধুমতী ব্যাংক লিমিটেডের খুলনা শাখায় ৩ কোটি টাকার এফডিআর রয়েছে। একটি গাড়ির মূল্য সাড়ে ২৩ লাখ টাকা, ১৪ ভরি স্বর্ণ, ১ লাখ ৭৮ হাজার টাকা মূল্যের ইলেকট্রনিকস সামগ্রী, দেড় লাখ টাকা মূল্যের আসবাবপত্র ও স্ত্রীর নামে ব্যাংকে ১৫ লাখ টাকা রয়েছে। এছাড়া মধুমতী ব্যাংক খুলনা শাখায় মধুর ঋণ রয়েছে ৫২ কোটি ২৬ লাখ টাকা। তার নামে কোনো মামলা নেই।
তিন প্রার্থীই তাদের হলফনামায় উল্লেখিত তথ্য ও অর্থ কড়ির হিসাব সঠিক বলে জানিয়েছেন।
প্রার্থীদের হলফনামার তথ্য সম্পর্কে জানতে চাইলে রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আলাউদ্দীন বাংলানিউজকে বলেন, তারা যেসব তথ্য দিয়েছেন আমরা যাচাই-বাছাই করে দেখেছি সব ঠিক রয়েছে। নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে ৭ জন অংশগ্রহণ করতে চেয়েছেন। তাদের মধ্যে তিনজনের মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয় করে বৈধ প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, এবারের কেসিসি নির্বাচনে মোট ভোটার ৫ লাখ ৩৫ হাজার। ভোট কেন্দ্র ২৮৯টি এবং ভোট কক্ষ থাকবে এক হাজার ৭৩২টি। আগামী ২৫মে কেসিসি নির্বাচনের প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন। ২৬ মে প্রতীক বরাদ্দ করা হবে এবং ১২ জুন ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। 

বিজ্ঞাপন