কালের সাক্ষী পাঁচ শতাব্দীর নন্দীগ্রামের আলিয়া মসজিদ

।। নন্দীগ্রাম (বগুড়া) প্রতিনিধি ।। বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলায় কালের সাক্ষী হয়ে আছে প্রায় পাঁচ শতাব্দী প্রাচীন আলিয়া মসজিদ। নন্দীগ্রাম পৌর শহর থেকে ২০ কিলোমিটার পূর্বে গ্রামীণ সবুজ-শ্যামল পরিবেশে কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে মসজিদটি। মসজিদটি দেখতে পর্যটক ও দর্শনার্থীদের হৃদয় মনে গভীরভাবে নাড়া দেয় আজও। স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, নন্দীগ্রাম উপজেলার বুড়ইল ইউনিয়নের হাজারকি গ্রামের পূর্বপার্শ্বে অবস্থিত আলিয়া মসজিদ। স্থানীয় লোকজন প্রায় ২৫ বছর আগে পরিত্যাক্ত আলিয়া পুকুরপাড়ে জঙ্গল পরিস্কারের সময় বেরিয়ে আছে ছোট্ট এই মসজিদ। সে থেকে প্রতিদিনই আশেপাশের গ্রামের লোকজন দেখার জন্য সেখানে ভীড় করে থাকেন। নির্মাণ কাঠামো দেখে স্থানীয়দের ধারণা ৫০০ বছর আগে মসজিদটি নির্মিত। ১৩ ফুট দৈর্ঘ এবং ১৩ প্রস্থে নির্মিত মসজিদের উচ্চতা ২২ ফুট। মসজিদে পূর্বদিকে প্রবেশ ও বের হওয়ার জন্য ৩ ফুট উচ্চতার একটি দরজা রয়েছে। মসজিদের ভেতরে ঈমামসহ ৭ জনের নামাজ পড়ার মতো জায়গা রয়েছে। মসজিদের ভেতরে ছোট্ট একটি মেহরাব দেখা যায়। মসজিদের দেয়ালের চারপাশের কোণায় কারুকার্য চোখে পড়ছে এখনও। বাহিরের দেয়ালে পোড়া মাটির ইটগুলো কিছু কিছু অংশ ক্ষয়ে গেলেও মসজিদের ভিতরে প্রবেশ করলে এখনও এর সৌন্দর্য জানান দেয়। মসজিদের ভেতরে ওপরের দিকে গম্বুজের ইট ও দেয়াল এখনও চকচক করছে। যেন মাত্র কিছুদিন আগেই তৈরি করা হয়েছে। তবে কোন সাল, তারিখ বা কোন শাসকের আমলে এটি নির্মাণ হয়েছে তার কোনো নামফলক নেই। বর্তমানে অযতœ আর অবহেলায় মসজিদটির গায়ে ও গম্বুজে শ্যাওলা ও বিভিন্ন আগাছা জন্মেছে। মসজিদের ঈমাম মাওলানা হেলাল উদ্দিন বলেন, আমরা ছোটবেলা থেকেই শুনে আসছি এই মসজিদ জঙ্গল পরিস্কারের সময় বের হয়ে এসেছে। স্থানীয়ভাবে দুইবার সংস্কার করা হলেও সরকারি কোনো উদ্যোগ আজ পর্যন্তনেওয়া হয়নি। প্রাচীন এই স্থাপত্য সংরক্ষণের কোনো উদ্যোগ না থাকায় প্রায় ৫০০ বছরের পুরোনো এই মসজিদটি সংরক্ষণের প্রয়োজন বলে মনে করছেন স্থানীয় সচেতন মহল। মসজিদ সংলগ্ন বাড়িতে বসবাস করেন জেল হক বলেন, শুনেছি জঙ্গল কেটে পরিস্কার করায় মসজিদটি দৃশ্যমান হয়েছে। তার দাদার আমল থেকে মসজিদটি এ রকম অবস্থায় দেখে আসছেন। কত বছর আগে কারা কীভাবে মসজিদটি নির্মাণ করেছেন এ বিষয়ে কেউ পরিস্কার কিছু বলতে পারেন না। আর জিনের মসজিদ হিসেবে প্রচার হওয়ায় প্রতিদিনই বিভিন্ন এলাকা থেকে অনেকে আসেন মসজিদটি দেখার জন্য। নিয়মিত এই মসজিদে নামাজ পড়েন এবং মসজিদটি দেখাশোনাও করেন তিনি। বুড়ইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান বলেন, মসজিদটির সঠিক নির্মাণকাল কারও জানা না থাকলেও তারা বংশ পরম্পরায় শুনে আসছেন মসজিদটি জঙ্গলের ভিতর থেকে বের হয়েছে। মসজিদটির আনুমানিক বয়স ৫০০ বছর। এটি সরকারি উদ্যোগে সংরক্ষণ করা প্রয়োজন। এবিষয়ে নন্দীগ্রাম উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. হুমায়ুন কবির বলেন, হাজারকি গ্রামে প্রাচীন আমলের মসজিদ আছে তা জানা নেই। তিনি বলেন, লোক পাঠিয়ে খোঁজখবর নিয়ে পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিজ্ঞাপন