জাসদকে 'ছাড়' দিতে নারাজ আ.লীগ

॥ নন্দীগ্রাম (বগুড়া) প্রতিনিধি ॥
যখন যে দলের প্রার্থী জয়ী হয়েছেন, সেই দলই তখন ক্ষমতার স্বাদ নিয়েছে। গত ১২টি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এটাই ঘটেছে বগুড়া-৪ (নন্দীগ্রাম-কাহালু) আসনে। এবারও আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাসদ ও জাতীয় পার্টি চার দলেই বড় নেতারা এখানে মনোনয়নপ্রত্যাশী।
আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চান নন্দীগ্রাম উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন রানা। তাঁর বিপরীতে আধাডজন মনোনয়নপ্রত্যাশী দাঁড়িয়ে গেছেন। তাছাড়া এআসনের বর্তমান সংসদ সদস্য জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) বগুড়া জেলা কমিটির সভাপতি একেএম রেজাউল করিম তানসেন। জোটবদ্ধ নির্বাচন হলে তিনিই আবার মনোনয়ন পেতে পারেন, এমন শঙ্কায় আছেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের মধ্যে।
সে তুলনায় অনেকটা সুবিধাজনক স্থানে আছে বিএনপি। সাবেক সংসদ সদস্য মোশারফ হোসেনের পেছনে এককাট্টা দল। অবশ্য তাঁর মনোনয়ন পাওয়ার পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়াচ্ছেন বিএনপির আরেকজন সাবেক এমপি ডা. জিয়াউল হক মোল্লা।
১৯৭৩ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত এই আসনে মোট ১২টি জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়েছে। এরমধ্যে ১৯৮৮ সালের ৩ মার্চ ও ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন বাদ দিলে থাকে ১০টি। তারমধ্যে বিএনপি সাত বার, জাসদ দুইবার ও জাতীয় পার্টি একবার বগুড়া-৪ আসনে এমপি নির্বাচিত হয়েছে। আর ১৯৭৯ সালের নির্বাচনে জিতেছিলেন বিএনপির প্রার্থী একেএম মতিয়ার রহমান প্রামাণিক। সরকার গঠন করেছিল বিএনপি।
এই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা হলেন- নন্দীগ্রাম উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন রানা, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রেজাউল আশরাফ জিন্নাহ, উপজেলা মহিলা আ’লীগের আহবায়ক মাহাফুজা বেগম, বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য তৌহিদুল করিম কল্লোল, অধ্যাপক আহসানুল হক, কাহালু উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হেলাল উদ্দিন করিরাজ। ১৯৭৩ সাল থেকেই বিএনপি, জাসদ, জাতীয় পার্টির দখলে এই আসন। তবে ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিএনপি ভোট বর্জন করায় ও ভোটারদের কম উপস্থিতির জন্য সহজেই এমপি নির্বাচিত হয় জাসদের রেজাউল করিম তানসেন। এরপরে ২০২৩ সালে বিএনপির এমপি মোশারফ হোসেন পদত্যাগ করায় উপ-নির্বাচনে জেলা জাসদের সভাপতি রেজাউল করিম তানসেন জয়ী হন। এই আসনে দুইবার জাসদের এমপি থাকলেও সেই অর্থে শহর থেকে গ্রাম পর্যায়ে দলটি নিজেদের জায়গা ও কর্মী সমর্থক তেমন বাড়াতে পারিনি বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন।
তবে জোট ঠিক থাকলে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনে একেএম রেজাউল করিম তানসেনের মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। কিন্তু তৃণমূল আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের সঙ্গে জাসদের অভ্যান্তরীণ বিরোধ তানসেনের মাথাব্যথার কারণ হতে পারে। এখন তার জন্য বড় ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়াবে স্থানীয় আওয়ামী লীগ। বরাবরেই শরীক দলকে এই আসনটি ছাড় দেয়ার কারণে কমে যাচ্ছে দলীয় ভোট। আগ্রহ হারাচ্ছে নেতাকর্মীরা। কিন্তু এবার এই আসনটি ছাড় দিতে নারাজ দুই উপজেলার আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। ইতিমধ্যেই পাড়া-মহল্লায়, হাট-বাজারে গণসংযোগ করছেন প্রার্থীরা। কে পাবেন দলের মনোনয়ন এই বিষয়ে কোনো নিশ্চয়তা না থাকলেও মনোনয়নপ্রত্যাশী সকলেই বলছেন তারা কেন্দ্র থেকে গ্রিন সিগন্যাল পেয়েই মাঠে রয়েছেন।
অন্যদিকে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এই আসনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের যেমন শক্তিশালী প্রার্থী রয়েছে, ঠিক শক্তিশালী বিএনপির প্রার্থী রয়েছে, তেমনি নিবন্ধন বাতিল হওয়া জামায়াতেরও রয়েছে শক্তিশালী প্রার্থী। নির্বাচন নিয়ে কোনো পরিকল্পনা না থাকলেও মাঠে শোনা যাচ্ছে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকায় রয়েছেন বগুড়া জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-সাধারন সম্পাদক সাবেক এমপি মো. মোশারফ হোসেন, সাবেক এমপি ডা. জিয়াউল হক মোল্লা, সাবেক এমপি ইঞ্জিনিয়ার মোস্তফা আলী মুকুল। তবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনটি দখলে নিতে গোপনে নির্বাচনী কার্যক্রম চালাচ্ছে সাবেক জেলা জামায়াতের নায়েবে আমীর অধ্যক্ষ মাওলানা তায়েব আলী। এদিকে মাঠে রয়েছেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী শাহীন মোস্তফা কামাল ফারুক।
নন্দীগ্রাম উপজেলা আ’লীগের যুগ্ম-সাধারন সম্পাদক মুকুল মিঞা বলেন, জাসদের কোন প্রার্থী চাই না। শরীক দল থেকে এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর তৃণমূলের কোনো নেতাকর্মীর খোঁজখবর রাখেনা। তাই দলের অস্থিত্ব টিকিয়ে রাখতে হলে এবার আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীর কোনো বিকল্প নেই। 
আ’লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী আনোয়ার হোসেন রানা বলেন, তিনি বিগত নির্বাচনে এখানে দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে করোনাকালীন সময়ে দুই উপজেলায় ১৫ হাজার পরিবারের মাঝে খাদ্য সহায়তাসহ বিভিন্ন সহযোগীতা করেছি। এলাকার জনগণ ও দলের নেতাকর্মীরা চায় এই আসনটিতে নৌকার প্রার্থী নির্বাচন করুক। তৃণমূলের মতামতকে গুরুত্ব দিলে তিনি মনোনয়ন পাবেন বলে বিশ্বাস করেন। বর্তমান সরকারের যে পরিকল্পনা আছে তা বাস্তবায়ন ইতোমধ্যেই তৃণমূলে উন্নয়নচিত্র তোলে ধরে কাজ শুরু করেছেন তিনি। মনোনয়ন পেলে বগুড়া-৪ আসনটি শেখ হাসিনাকে উপহার দিতে পারবেন বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন তিনি। 
জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মনোনয়ন প্রত্যাশী তৌহিদুল করিম কল্লোল বলেন, এই আসনে কখনো জাতীয় পাটির প্রার্থীকে আবার কখনো ১৪ দলের পক্ষ থেকে জাসদকে মনোনয়ন দেয়া হয়। ফলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা নৌকায় ভোট দিতে পারেনা। এবার তৃণমূল নেতাকর্মীদের আশা তারা জোটের প্রার্থীকে নয়, নৌকায় ভোট দেবে। প্রার্থী নৌকারই হবে। বর্তমান সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির তথ্য তুলে ধরে জনগনের মাঝে প্রচার করছি। পাশাপাশি কেন্দ্রের সঙ্গে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ রাখছি। তাই জনগণ চায় আমি এমপি নির্বাচন করি। আশা করি দলের মনোনয়ন পেলে জয়লাভ করবো।
বগুড়া-৪ আসনের জাসদের সংসদ সদস্য একেএম রেজাউল করিম তানসেন বলেন, সংসদ অধিবেশনে আছেন তিনি। পরে কথা বলবো বলে ফোন কেটে দেন।
এবিষয়ে নন্দীগ্রাম উপজেলা জাসদের সাধারন সম্পাদক মাহাবুবুর রহমান রুস্তম বলেন, এরআগে ১৪ দল থেকে মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচন করে জয়ী হয়েছি। এবারও আমরা ১৪ দল থেকেই মনোনয়ন চাইবো। তবে মনোনয়ন দেয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিবেন দলের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু মনোনয়ন না পেলে কি করবো সেই সময় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। পাশাপাশি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সাথে আমরা যোগাযোগের চেষ্টা করি এবং করছি। এখানে তাদের সঙ্গে কোনো বিরোধ নেই।
 

বিজ্ঞাপন