ধুনটে সন্ধ্যা নামলেই যে সড়কে ভাড়া দিগুণ, যাত্রী নিরুপায়

ফাইল ছবি

বগুড়ার ধুনট উপজেলার হুকুম আলী থেকে বিশ্বহরিগাছা, পাঁচথুপি, মথুরাপুর সড়কে সন্ধ্যার হলেই ব্যাটারি চালিত অটোরিক্সার ভাড়া বেড়ে দ্বিগুন গুনতে হয় অসহায় যাত্রীদের। নানা অযুহাতে নিজেদের ইচ্ছে মত ভাড়া নৈরাজ্য সৃষ্টি করে এ পথের অটোরিকশার চালকেরা। কিছু বলতে গেলে চালকদের রাজ্যের সেনাপতির মত কথা 'কম হবেনা গেলে চলেন'। ভাড়া নিয়ে সরাসরি হুমকির নজিরও রয়েছে এ সড়ক পথে। এ সড়কের একমাত্র যানবাহন অটোরিকশা। এদের এমন দৌরাত্ম বছরের পর বছর, চলছে একুই ভাবে। যদিও সিএনজি চলে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত। সন্ধ্যার পর থেকেই চলে অটোরিকশা চালকদের নৈরাজ্যতায় ভাড়া ডাকাতি।  অন্য পদ্ধতিতে যেতেও তারা ভয় পান। যদি ছিনতাই হয়। তারা স্থাণীয় চালক, এজন্য যাত্রীরা নিরুপায় হয়ে যেতে বাধ্য হয়।

এমনিতে রোদ বৃষ্টি-ঝড়-তুফান কুয়াশা এ কারনে ভাড়া বেড়ে যাওয়ার নিত্য রেওয়াজ তো আছেই। তবে বছর জুড়ে সন্ধ্যা থেকে রাত্রীকালিন নৈরাজ্য নামের ভাড়ার বাড়ানোর প্রথা চালু করেছেন ব্যটারি চালিত অটোরিক্সা চালকরা। এসময় যাত্রাপথে অসহায়ের সুযোগে ভাড়া বেশি দিয়ে যাত্রীদের চলাচল করতে বাধ্য করে অটোরিকশা চালকেরা। সন্ধ্যার পর এ সড়কে পর্যাপ্ত আর কোন বিকল্প যানবাহন না থাকায় যাত্রীদের দ্বিগুন থেকে তিনগুণ ভাড়া গুনতে হয়। আর চালকদেও পছন্দমতো ভাড়া না হলে যাবোনা বলে সাফ জানিয়ে দেয় যাত্রীদের মুখের উপর। প্রয়োজনে রাত গড়িয়ে সকাল হবে তবুও তারা পছন্দসই ভাড়া না হলে বাহনের চাবিও স্পর্শ করাবেন না। এ নিয়ে সড়কটিতে চলাচলরত শত শত সাধারণ যাত্রীর অভিযোগ থাকলেও বিষয়টির প্রতি কর্ণপাত নেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বা জন প্রতিনিধিদের।
ধুনটের হুকুম আলী স্ট্যান্ডে সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, সন্ধ্যার পর হুকুম আলী থেকে মথুরাপুর বাজারের  ভাড়া ২৫ টাকার স্থলে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা করে নেয়া হয়। হুকুম আলী থেকে বিশ্বহরিগাছার ভাড়া ১৫/২০ টাকার স্থলে ১০০ টাকা থেকে ১৩০ টাকা পর্যন্ত নেয়া হচ্ছে। এতে করে অটোরিকশা চালকদের কাছে জিম্মি হয়ে আছে সাধারন যাত্রীরা। রাত্রি বাড়ার সাথে সাথে অটোরিকশার ভাড়াও বাড়তে থাকে। হুকুম আলী থেকে মথুরাপুর বাজারের দুরত্ব ৯ কিলোমিটার। আর এই স্থানের মধ্যে অটোরিকশার চালকরা সিন্ডিকের মাধ্যমেই ভাড়া বৃদ্ধি করে থাকে। রাত বাড়তে থাকে বাড়তে থাকে ভাড়া নামের টাকার অংক। গত ২০ মার্চ ২০২৩ সোমবার রাত ঘড়ির কাঁটায় ৯ টা বেজে ৪২ মিনিট। যাত্রা হুকুম আলী থেকে মথুরাপুর বাজার। শুনশান নিরাবতা। কথাও কোন গাড়ী নেই। কাঁচা পাকা চুলে মধ্য বয়োসি এক অটো চালক। ভাড়া চাইলেন ১৫০ টাকা। অনেকটা দর কশাকশির পর অন্য কোন গাড়ী না থাকায় বাধ্য হয়েই রওনা দেওয়া। যেতে তো হবেই, বাড়ী ওখানে। ওই দিনই ঢাকা থেকে ফিরেছেন মামুন নামের বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী। হুকুম আলী থেকে পাঁচথুপি বাজারে অটোরিকশা যোগে আসার সময় রাজু আহমেদ নামে এক যাত্রী জানান, সন্ধ্যা হলেই ২০ টাকার ভাড়া দিতে হয় ৫০ থেকে ৮০/১০০ টাকা। বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় বাধ্য হয়েই ভাড়া দিতে হয়। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমি হলফ করে বলতে পারি বাংলাদেশে আর কোন সড়কে এত বেশী ভাড়া আদায় করা হয় না। যা এই দক্ষিণ ধুনটের পাচথুপি, বিশ্বহরিগাছা, মথুরাপুর সড়কে দিতে হয়। আরেক যাত্রী জানান, আমি সপ্তাহে ৩/৪ বার পাঁচথুপি বাজার থেকে  বগুড়ায়  যাওয়া আসা করি। বগুড়ায় কাজ শেষে দ্রুত ধুনটে ফিরে আসি। যদি কোন কারনে একটু দেরি করে ফেলি তাহলে সন্ধ্যার পর বেশি ভাড়া গুনতে হবে।
এদিকে যাত্রী সেজে ব্যাটারি চালিত অটোরিক্সা চালকদের কাছে অতিরিক্ত ভাড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে চালকরা বলেন, প্রতিদিনই সন্ধ্যার পর অতিরিক্ত ভাড়া নেয়া হয়। এটাই সিস্টেম। আপনারা গেলে যান, না হইলে অন্য চিন্তা করেন। কারন ও দিকে যাওয়ার সময় ২/১ জন যাত্রী পাওয়া গেলেও আসার সময় খালি গাড়ি নিয়ে আসতে হয়। কয়েক বছর আগের কথা। মথুরাপুর থেকে ধুনটে বাস চলাচল করতো। তখন যাতায়াতের এতটা সমস্যা হতোনা যেমনটা এই আধুনিক যান্ত্রিক সময়ে হচ্ছে। অতিরিক্ত ভাড়া ও দুর্ভোগ থেকে বাঁচতে আবারও বাস চলাচল শুরু হলে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলতাম। এমনটাই মন্তব্য করেন স্থানীয় সাধারন মানুষ।

বিজ্ঞাপন