বিভিন্ন জেলায় বিএনপির পদযাত্রায় হামলা-সংঘর্ষ

ছবি- প্রতিনিধি

সরকারের পদত্যাগ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ ১০ দফা দাবিতে শনিবার জেলায় জেলায় পদযাত্রা করেছে বিএনপি। এ পদযাত্রায় বিভিন্ন জায়গায় বাধা ও হামলার ঘটনা ঘটেছে। কোথাও আবার ধাওয়া, পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংর্ঘষের ঘটনাও ঘটেছে। পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা পদযাত্রায় হামলা করেছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। এসময় বিভিন্ন জায়গা থেকে অসংখ্য বিএনপির নেতাকর্মীকে আটক করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। আহতও হয়েছে অসংখ্য বিএনপি নেতাকর্মী।  শনিবার ঢাকা বাদে সকল জেলায় একযোগে এ পদযাত্রা করেছে বিএনপি। ঢাকায় পদযাত্রা হবে হবে রোববার।
বাগেরহাটে বিএনপির ৪০ নেতা–কর্মী আটক
বাগেরহাটে বিএনপির পদযাত্রা কর্মসূচিতে বাধা দিয়েছে পুলিশ। এ সময় শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে দলের ৪০ নেতা–কর্মীকে আটক করা হয়েছে বলে দাবি করেছে বিএনপি। এ ঘটনায় বেলা পৌনে ১১টায় বাগেরহাট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে করে জেলা বিএনপি। সেখানে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক ওবায়দুল ইসলাম বলেন, বিএনপির পদযাত্রা কর্মসূচিতে পুলিশ বাধা দিয়ে কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-প্রচার সম্পাদক শামীমুর রহমান, জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এমএ সালামসহ অন্তত ৪০ নেতা-কর্মীকে বিনা কারণে আটক করেছে। এ ছাড়া গেল রাত থেকে জেলা সদরসহ বিভিন্ন উপজেলায় বিএনপি নেতা–কর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হানা দেয় পুলিশ।
এ বাগেরহাটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আসাদুজ্জামান বলেন, আজ আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দুই দলের কর্মসূচি ছিল। শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখতে পুলিশের পক্ষ থেকে বিএনপিকে পরে কর্মসূচি পালনের জন্য বলা হয়েছিল। তারা তা না মেনে আগ্রাসীভাবে কর্মসূচি পালন এবং নাশকতার চেষ্টা করে। এ সময় পুলিশ বেশ কয়েকজনকে আটক করেছে। আটক ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদ ও যাচাই-বাছাই করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ঝালকাঠিতে তিন পুলিশ আহত
ঝালকাঠিতে বিএনপির পদযাত্রা কর্মসূচিতে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে তিন পুলিশ কর্মকর্তা আহত হয়েছেন। এ সময় পুলিশ বেধড়ক লাঠিপেটা করলে শতাধিক নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন বলে দাবি করেছে বিএনপি।
আহত পুলিশ কর্মকর্তারা হলেন ঝালকাঠি সদর থানা পরিদর্শক (তদন্ত) ফিরোজ কামাল, উপপরিদর্শক (এসআই) নজরুল ইসলাম ও মো. শফিকুর রহমান। তাঁরা তিনজনেই ইটের আঘাতে রক্তাক্ত আহত হন। তাঁদের ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হয়েছে।
পরে ঘটনাস্থল থেকে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের ১৫ নেতা–কর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। তাঁদের মধ্যে জেলা যুবদলের সদস্যসচিব মো. আনিসুর রহমান ও সদর উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. তাওহীদও রয়েছেন।
পটুয়াখালীতে পুলিশের ধাওয়া ও লাঠি পেটা
পটুয়াখালীতে বিএনপির পদযাত্রা কর্মসূচিতে ধাওয়া দিয়ে নেতা–কর্মীদের লাঠিপেটা করেছে পুলিশ। জানা যায় সমাবেশে শেষে পদযাত্রা শুরু হয়ে পৌরসভা মোড়ে যাওয়ার পথে পুলিশ পেছন থেকে ধাওয়া দিয়ে লাঠিপেটা শুরু করে। এতে নেতা–কর্মীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান।
জেলা বিএনপির সদস্যসচিব স্নেহাংশু সরকার বলেন, ধাওয়ার সঙ্গে নেতা–কর্মীদের লাঠিপেটা শুরু করে পুলিশ। এ সময় নেতা–কর্মীদের কাছ থেকে ব্যানার–ফেস্টুন কেড়ে নেওয়া হয়। এ ঘটনায় বেশ কয়েকজন নেতা–কর্মী আহত হয়েছেন।
এ ব্যাপারে পটুয়াখালী সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান বলেন, এমনিতেই জেলা বিএনপিতে দ্বন্দ্ব রয়েছে। কে সামনের সারিতে থাকবে, কে বক্তব্য রাখবে, এসব নিয়ে নিজেদের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হলে শহরের পরিবেশ ও শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখতে পুলিশ এ পদক্ষেপ নেয়।
নেত্রকোনায় পদযাত্রার আগেই হামলা
নেত্রকোনায় বিএনপির পদযাত্রা কর্মসূচিতে অংশ নিতে জড়ো হওয়া নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা হয়েছে। এ সময় ব্যানার-ফেস্টুন কেড়ে নিয়ে অগ্নিসংযোগ ও মোটরসাইকেল–মাইক্রোবাস ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এতে পদযাত্রা কর্মসূচি পণ্ড হয়ে গেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দুটি ফাঁকা গুলি ছুড়েছে পুলিশ।
আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের এই হামলায় ২৩ জন আহত হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। এ সময় পুলিশ বিএনপির পাঁচজন নেতা-কর্মীকে আটক করে। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে আওয়ামী লীগ বলছে, বিএনপির নিজেদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের কারণে মারামারি করে কেউ আহত হতে পারেন।
নাটোরে বিএনপির পদযাত্রা শুরুর আগে ককটেল নিক্ষেপ
নাটোরে বিএনপির পদযাত্রা শুরুর আগে মোটরসাইকেলের বহর থেকে ককটেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। সকাল পৌনে ৮টার দিকে শহরের আলাইপুরে জেলা বিএনপির কার্যালয়ের পাশে একে একে ছয়টি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটে। পরে পুলিশবেষ্টিত অবস্থায় বিএনপি পদযাত্রা কর্মসূচি শেষ করে।
নাটোর শহর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান খান চৌধুরীর দাবি, ওই মোটরসাইকেলের বহরে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতা-কর্মীরা ছিলেন। তারা বিএনপি নেতা-কর্মীদের ভয় দেখানোর জন্য ককটেল ফাটিয়েছেন। তবে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ফরহাদ বিন আজিজ এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাঁর মতে, বিএনপি নিজেরাই ককটেল ফাটিয়ে সত্য ধামাচাপা দিচ্ছে।
ককটেল বিস্ফোরণের বিষয়ে নাটোর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাছিম আহম্মেদ বলেন, পুলিশ বিএনপির কর্মসূচিস্থলে যাওয়ার পর এমন ঘটনা ঘটেনি। সকালের দিকে বিএনপি কার্যালয় থেকে কিছুটা পশ্চিমে কয়েকটা শব্দ হয়েছে এবং কিছু জর্দার কৌটা পড়ে আছে বলে শুনেছেন। তাঁরা ঘটনাটি তদন্ত করে দেখছেন।
নীলফামারীতে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া
নীলফামারীতে সংঘর্ষ ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার মধ্য দিয়ে বিএনপির পদযাত্রা ও আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশ হয়েছে। এ ঘটনার জন্য একে অপরকে দায়ী করেছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি।
এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা সূত্রে জানা গেছে, আজ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শহরের পৌর সুপারমার্কেটের সামনে শান্তি সমাবেশ শুরু করে জেলা আওয়ামী লীগ। একই সময়ে পৌর সুপারমার্কেটে জেলা বিএনপির দলীয় কার্যালয়ের সামনে পদযাত্রার জন্য সমবেত হয় জেলা বিএনপির একাংশ। দুই সভাস্থলের দূরত্ব ছিল মাত্র ৫০ গজের মতো। এ সময় জেলা আওয়ামী লীগের সভাস্থল থেকে কয়েকজন যুবক বিএনপির সভাস্থলে হামলা চালিয়ে তাদের টাঙানো ব্যানার ছিঁড়ে ফেলে চেয়ার ভাঙচুর করে। এতে উভয় পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

বিজ্ঞাপন