বিএনপি কেন আলোচনায় বসবে, প্রশ্ন ফখরুলের

ছবি-সংগৃহীত

ঁবিএনপি আলোচনায় কেন বসবে প্রশ্ন করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীতো কথা রাখেন না, দাম্ভিকতায় ভোগেন। ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে যেসব ওয়াদা করেছেন একটিও রাখেননি। যারা দেশনেত্রীকে বিনা অপরাধে কারাগারে রাখেন তাদের সঙ্গে কিসের আলোচনা। মঙ্গলবার (১৪ মার্চ) দুপুরে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।/
মির্জা ফখরুল বলেন, আলোচনা করবো কেন, তিনিতো কথাই রাখেন না, আমরা সেজন্য ডায়ালগের (আলোচনা) কথা বলি না, একবারের জন্যও কথা বলি না। যারা দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে নির্বাচনের আগে বিনাকারণে মিথ্যা মামলা দিয়ে জেলে আটকে রাখে তাদের সঙ্গে আবার কিসের ডায়ালগ করবো। ওই ধরনের মামলায় প্রত্যেককে সাত দিনের মধ্যে জামিন দেওয়া হয়েছে। দেশনেত্রীকে এখন পর্যন্ত জামিন দেওয়া হয়নি। এখন পর্যন্ত নাটক চলছে। একজন মন্ত্রী বলেন, তিনি রাজনীতি করতে পারবেন, আরেকজন বলেন রাজনীতি করতে পারবেন না। একজন বলেন, নির্বাচন করতে পারবেন, আরেকজন বলেন পারবেন না। এগুলো হচ্ছে সব প্রতারণা। জনগণকে ভুল বোঝানো। আমার কথা খুব পরিষ্কার। আপনাদের এতই যদি সাহস থাকে, এতই যদি উন্নয়ন করে থাকেন, এতই যদি জনগণের ভালোবাসা থাকে, আপনারা রিজাইন (পদত্যাগ) করেন, একটা কেয়ার টেকার সরকারকে দায়িত্ব দেন। ক্ষমতায় যে আসবে আমরা মাথা পেতে নেবো। আপনারা পুলিশকে নিয়ে নির্বাচন করেছেন কীভাবে করেছেন সব দেশের মানুষ জানে। সবাই খাম পেয়েছে, কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। প্রিজাইডিং অফিসারও খাম পায়।/
*মির্জা ফখরুল বলেন, ১৩ মার্চ প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, (নো প্রেসার) তার ওপরে কোনো চাপই কাজ করছে না। এখানেই বোঝা যায় যে তার এই দেশের প্রতি, মানুষের প্রতি কোনো দায়িত্ব নেই, তার কোনো সম্মান নেই, তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে এ রাষ্ট্রকে একটা কার্যকর রাষ্ট্র করার চিন্তা তার নেই। প্রেসারগুলো পড়ছে কেন? কারণ গত ‍দুটি নির্বাচন এক তরফাভাবে তাদের ক্ষমতায় বসানোর জন্য যত রকমের ভোট জালিয়াতি, কারচুপি, সন্ত্রাসের মধ্যে দিয়ে ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে যাওয়ায় বাধা দিয়ে ভোটার শূন্য রেখে ফলাফল ঘোষণা করে বে-আইনিভাবে ক্ষমতায় গেছে। এখন যখন আবার সামনে নির্বাচন আসছে তারা দেখছে যে জনগণ তাদের সঙ্গে নেই।/ যদি সত্যিকার অর্থে একটা সুষ্ঠু নির্বাচন হয় তাহলে তারা ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারবে না, ক্ষমতায় যেতে পারবে না। একারণে আগে থেকে তারা একটা অবস্থা তৈরি করছেন। আমাদের দেশের নির্বাচনের ব্যাপারে কেউ বাইরে থেকে হস্তক্ষেপ করবে না। কেউ কথা বলবে না, আমরা আমাদের মতো করে করছি। বিদেশিরা যারাই যাচ্ছে তারা বলছে একটা সুষ্ঠু নির্বাচন দেখতে চাই। তারা (সরকার) বলছে না সব ঠিক আছে তো। নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু নির্বাচন করবে। তারা ফ্রি, যা খুশি তাই করতে পারবে। গতকালও একই কথা বলেছে। এর আগে ব্রিটিশ মন্ত্রী গেলেন, তার আগে আরও একজন গেলেন। তাকেও একই কথা বলেছেন।  /
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ২০১৮ সালের নির্বাচনের রেফারেন্স দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন ‘আমরা ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে আলোচনায় বসেছিলাম। তাতে কোনো ফলাফল আসেনি। ’ আমাদেরও প্রশ্ন ওই জায়গায়। তিনি মিডিয়ার মধ্যে সব জায়গায় কমিটমেন্ট করেছেন যে নির্বাচনে সরকার কোনো হস্তক্ষেপ করবে না। পুলিশ আর গ্রেফতার করবে না, মামলা দেবে না। তার তিনদিন পর থেকে সারাদেশে পুলিশি নির্যাতনে বিএনপি ও বিরোধীদলের নেতাকর্মীরা সব পালিয়ে গেছে। ঘরে থাকতে পারেনি, রাস্তায়ও থাকতে পারেনি। আমি বিএনপির মহাসচিব আমি আমার এলাকায় গিয়েছি, সেখানে আমার গাড়ির ওপরে হামলা হয়েছে। আমার গাড়ি বহরের ওপর হামলা হয়েছে, পুলিশ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখেছে। নির্বাচনের সাত/আট দিন আগে থেকে নতুন নতুন প্লট তৈরি করা হয়েছে। তারা যেসব নির্বাচনী অফিস করেছিল সেখানে নিজেরা আগুন লাগিয়ে দিয়েছে। প্রত্যেকটা কেন্দ্রে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে। তিন দিন আগে আমাদের স্থানীয় নির্বাচন কর্মীদের গ্রেফতার করা হয়েছে। আমার ঠাকুরগাওয়ের বাসার চতুর্দিকে বেষ্টনী করে রেখেছিল। আমাদের অসংখ্য প্রার্থী ঘর থেকে বের হতে পারেনি। নির্বাচনের আগে ২১ জন প্রার্থীকে গ্রেফতার করেছে।  
*তিনি বলেন, শেষের দিকে আমরা ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে এসব বিষয়ে জানাতে গেলাম। তিনি (সিইসি) এমন আচরণ করলেন যে, আমরা বের হয়ে এলাম। এখন যদি শেখ হাসিনা বলেন, হোয়াট ইজ দ্য রেজাল্ট। রেজাল্ট ইজ নো। হোয়াট হ্যাব ইউ ডান। তারপরেও কি করে উনি আশা করেন যে তিনি সরকারে থাকবেন আর এই দেশের রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচন করবে। শুধু বিএনপিতো নয়, আজকে সব দলগুলো কেন একথা বলছে যে এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাওয়া যাবে না। এমনকি সিপিবি পর্যন্ত বলেছে এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাওয়া যাবে না। এ বিষয়গুলো তিনি (প্রধানমন্ত্রী) যখন বলেন, তখন তিনি চূড়ান্তভাবে সত্যের অপলাপ করেন, জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করেন, জনগণকে বিভ্রান্ত করেন। তিনি একটা প্রচণ্ডরকম দাম্ভিকতায় ভুগছেন। তিনি গণতন্ত্রের বেসিক কথাগুলোর বাইরে চলে যাচ্ছেন। আমরাতো তার সঙ্গে ডায়ালগ করবো না।  
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘কেয়ার টেকার সরকার চিন্তাও করবেন না। এটা এখন আর চলবে না। ’ ২০০৬ সালেও তো দিয়েছিলেন। কেয়ার টেকার সরকারের সংস্কার সংসদে দিয়েছিলেন। আমাদের কাছে কপি আছেতো। একই জিনিস এখন আমরা যা বলছি ওনারা একই কথা বলেছেন। দেশটাকে বাঁচানোর দায়িত্ব একা বিএনপির না। দেশ বাঁচানোর দায়িত্ব সমগ্র দেশের মানুষের। বিশেষ করে #আওয়ামী লীগের। যারা দাবি করে যে, তারা এই দেশের স্বাধীনতায় নেতৃত্ব দিয়েছে। তারা সরকারে আছে, তাদেরই দায়িত্ব।
বিএনপি নমিনেশন বাণিজ্য করেছে, প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, এটা তাদের অভ্যাস। আমি নাম বলবো না, নাম বলা সৌজন্যমূলক নয়, কত টাকা দিয়ে কে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব পায়, কত টাকা দিয়ে কে মন্ত্রীত্ব পায়, এটা আমরাও জানি। সুতরাং এ কথাগুলো বলবেন না। একটা প্রশ্ন আছে আমরা তিনজন করে কেন দিয়েছিলাম। আমরা তিনজন করে দিয়েছি আওয়ামী লীগের জন্য। আমরা জানি আওয়ামী লীগ শয়তানিগুলো করতেই থাকবে। তারা আমাদের প্রার্থীদের বে-আইনি ঘোষণা করবে। উপযুক্ত নয় ঘোষণা করবে। ব্যাংকের ইস্যু নিয়ে আসবে। ট্রাইব্যুনাল থেকে আউট করে দেবে। সেজন্য আমাদের বিকল্প একজন করে প্রার্থী রাখতে হয়েছে। আমরা তিনজন রাখি, দশ জন রাখি তোমাদের কী? 
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ইসমাঈল জবিউল্যাহ, বিএনপি নেতা কামরুজ্জামান রতন, জেড খান রিয়াজ উদ্দীন নসু, সাঈদ সোহরাব, বাবুল আহমেদ, বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস উইং সদস্য শামসুদ্দিন দিদার, মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান ও ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ’র প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মো. হানিফ।

বিজ্ঞাপন