বগুড়ার শেরপুরের ঐতিহাসিক ‘ খেরুয়া মসজিদ ‘

খেরুয়া মসজিদের বর্তমান ছবি

#বাংলাদেশের প্রত্ননিদর্শন খেরুয়া মসজিদ। মসজিদের দেয়ালে স্থাপন করা শিলালিপি থেকে জানা যায়, ১৫৮২ সালে জওহর আলী কাকশালের পুত্র মির্জা মুরাদ খান কাকশাল মসজিদটি নির্মাণ করেছেন। প্রাচীন এই মসজিদে নিয়মিত নামাজ আদায় করেন মুসল্লিরা। মসজিদের চার কোণে চারটি মিনার। দেয়ালগুলো চওড়া। চুন-সুরকি দিয়ে গাঁথা হয়েছে পাতলা ইট। দেয়ালটি ১ দশমিক ৮১ মিটার চওড়া।

ads1
*বগুড়া শহর থেকে ১৮ কি:মি: দক্ষিনে ঢাকা-বগুড়া মহাসড়ক  সংলগ্ন   সুপ্রাচীন শহর শেরপুর । বগুড়া পৌরসভার একদিন আগে ১৮৭৬ সালে শেরপুর পৌরসভা স্থাপিত হয়।/ এখানে রয়েছে অনেক ঐতিহাসক নিদর্শন। খেরুয়া মসজিদের সুনিপুন নির্মান শৈলী এখনও মানুষের মন কাড়ে। শাহতুরকান,শাহবন্দেগীর মাজার এখানে মুসলিম ঐতিহ্যেরই স্বাক্ষী। ইতিহাস খ্যাত অনেক কাহিনী বর্তমান এই প্রর্জন্মের কাছে আজো প্রায় অজানা।
ইতিহাস থেকে জানা যায়, এখানে ৩৬০ জন আউলিয়া সমাহিত আছেন। তাদের অনেক স্মৃতি কালের গর্ভে হারিয়ে গেলেও এখনো অনেক স্মৃতি চিহৃ বিদ্যমান।/ ইতিহাস খ্যাত হযরত শাহ তুর্কান ও গাজী শাহ বন্দেগী এর সমাধিস্থান দরগাহ শরীফ আমাদের মাঝে কালের স্বাক্ষী হয়ে আজো বিদ্যমান।
*উত্তরাঞ্চলের প্রবেশদ্বার বগুড়ার শেরপুর শহরের অদূরে মাত্র ১ কিলোমিটার দক্ষিন-পশ্চিমে প্রায় সাড়ে ৪শ বছরের প্রাচীন খন্দকার টোলা খেরুয়া মসজিদের অবস্থান।/ গ্রামীণ নিরিবিলি  সবুজ শ্যামল পরিবেশে অপূর্ব নির্মান শৈলী সম্বলীত খেরুয়া এই মসজিদ আজও দর্শনাথীদের হৃদয় কাড়ে।  ads2
*মসজিদের গায়ে সংস্থাপিত ফার্সি শিলালিপি থেকে জানা যায়, জওহর আলী কাকশালের পুত্র মির্জা নবাব মুরাদ খানের পৃষ্টপোষকতায় আব্দুস সামাদ ফকির ৯৮৯ হিজরীর ২৬ জিলকদ (১৫৮২ খ্রিঃ) সোমবার মসজিদটির ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। উত্তর দক্ষিন লম্বা মসজিদের বাইরের মাপ দৈর্ঘ্য ৫৭ ফুট এবং প্রস্থে সাড়ে ২৪ ফুট। আর ভিতরের মাপ দৈর্ঘ্য ৪৫ ফুট ও প্রস্থে সাড়ে ১২ ফুট। /চারিদিকের দেওয়াল গুলো প্রায় ৬ ফুট পুরো। মসজিদের চারকোণে ৪টি মিনার ও পূর্ব দেওয়ালে ৩ টি দরজা রয়েছে। তিন গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদের মাঝের দরজাটি অন্য দুটি থেকে আকারে অনেক বড়। আয়তকার ফ্রেমের মধ্যে অধ্যগোলাকার মেহরাব গুলো স্থাপিত। মসজিদের কার্নিস বাকানো আছে। দেওয়ালে কিছু কিছু পোড়া মাটির চিত্র ফলকও ছিল। তবে সংখ্যায় খুবই, দেওয়ালগুলো সাদাসিধে ধরনের বলা যেতে পারে। বাগেরহাটের ৬০ গম্বুজ মসজিদ ও শাহজাদপুরে অবস্থিত প্রাচীন মসজিদের নির্মান শৈলীর সাথেএই খেরুয়া মসজিদের অনেক মিল দেখা যায়। /ইট ও চুন সুড়কি ছাড়া ও খেরুয়া মসজিদের নির্মান কাজে বৃহদাকার কৃষ্ণ পাথর ব্যবহার করা হয়েছে। মসজিদের গায়ে দুইটি শিলালিপি ছিল, যার একটির ভিতরে রক্ষিত ছিল মুল্যবান সম্পদ যা পরবর্তীতে ব্যহৃত হয়।/ আর একটি বর্তমানে পাকিস্থানের করাচি যাদুঘরে রয়েছে। সম্রাট আকবরের আমলে মসজিদটি নির্মিত হওয়ায় এর গাঁয়ে বিভিন্ন জায়গায় ব্যাতিক্রম অনেক চিহৃ পাওয়া গেছে। স্থাপত্য বিশারদদের মতে খেরুয়া মসজিদে সুলতানী ও মুঘল আমলের মধ্যবর্তী স্থাপত্য নির্দশন প্রকাশ পেয়েছে। এতে বার কোনা ও আট কোনা কলাম ব্যবহার করা হয়েছে।/ যা বাংলার স্থাপত্য শিল্পে বিরল।/ এই মসজিদটি বহুদিন অনাদরে পড়ে ছিল।
#প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর মসজিদটির সীমানাপ্রাচীর তৈরি করে দেওয়ায় মসজিদের পরিবেশটি ভালো আছে ।
এর মধ্যে অনেক গাছ পালা জন্মে চারিদিকে জঙ্গলে পরিপূর্ন ছিল। ৯০ এর দশকে প্রত্নতত্ত বিভাগ এই মসজিদটি সংস্কার করার ফলে মসজিদের আগের অবস্থা ফিরে এসেছে। এখন নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ও জুম্মার নামাজ আদায় করা হয়।
প্রত্নতত্ত বিভাগ ১৯৮৮ সাল থেকে মসজিদের ৪৮ শতক জায়গাসহ দেখাশোনার জন্যে একজন খাদেম নিয়োগ করেছেন। দেশ বিদেশের বহু পর্যটক দর্শনার্থী ও স্থাপত্য বিশারদরা এই মসজিদ পরিদর্শন করেছেন। সরে জমিনে গিয়ে মসজিদের রক্ষনাবেক্ষনের দায়িত্বে নিয়োজিত খাদেম আব্দুস সামাদের সাথে কথা হলে তিনি জানান,বর্তমান জেলা প্রশাসক এর আন্তরিকতায় ইতোমধ্যে  এই সুরম্য মসজিদ স্থলে যাওয়ার জন্যে পাকা  রাস্তা নির্মিত হয়েছে । ঢাকা বগুড়া মহাসড়ক থেকে আনুমানিক এক কি:মি: দূরে অবস্হিত  মসজিদটি  পরিদর্শনে আসা দেশ বিদেশের ভ্রমন পিয়াসী মানুষের যেমন তৃষ্ণা মেটাবে তেমনি মুসলিম স্থাপত্য সর্ম্পকে নতুন প্রজন্মের মাঝে ধারনা জোগাবে।

বিজ্ঞাপন