প্রায় ৫০০ বছরের প্রাচীন ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে জমজমাটভাবে শুরু বগুড়ার শেরপুরে ঐতিহ্যবাহী কেল্লাপোশী মেলা। মেলাকে ঘুরে ৭দিন ধরে চলছে প্রস্তুতি। তিথি অনুযায়ী প্রতিবছর জ্যেষ্ঠের দ্বিতীয় রোববার থেকে শেরপুর উপজেলার কুসুম্বি ইউনিয়নের কেল্লাপোশী নামক স্থানে বসে এ মেলা। কালের আবর্তে মেলার সেই শক্তি ও জৌলুস অনেকটাই হারিয়ে হারিয়ে। তবুও মেলাকে ঘিরে মেয়ে জামাইদের আনন্দ কমতি নেই। এ মেলাটি স্থানীয়দের ভাষায় বলা হয় ‘জামাইবরণ’ মেলা।
কথিত আছে ১৫৫৬ খ্রিষ্টাব্দ থেকে এ মেলা হয়ে আসছে। এ সম্পর্কে জানা যায়, বৈরাগ নগরের বাদশা সেকেন্দারের একজন ঔরসজাত এবং একজন দত্তক ছেলে ছিলেন। ঔরসজাত ছেলের নাম ছিল গাজী মিয়া আর দত্তক ছেলের নাম কালু মিয়া। গাজী মিয়া দেখতে খুবই সুদর্শন ছিলেন। তারা রাজ্যের মায়া ত্যাগ করে ফকির সন্ন্যাসীর বেশ ধারণ করে ঘুরতে ঘুরতে ব্রাহ্মণ নগরে আসেন। সেখানে ব্রাহ্মণ রাজমুকুটের একমাত্র কন্যা চম্পা গাজীকে দেখে মুগ্ধ হন। একপর্যায়ে তারা দু’জন দু’জনকে ভালবেসে ফেলেন। পালিত ভাই কালু মিয়া বিষয়টি জানতে পেরে গাজীর বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে মুকুট রাজার নিকট যান। মুকুট রাজা ফকির বেশী যুবকের এরূপ স্পর্ধা দেখে ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে বন্দী করেন। এতে গাজী মিয়া কঠিন আঘাত পান। তিনি মুকুট রাজার নিকট থেকে ভাই কালু মিয়াকে উদ্ধারের জন্য কেল্লাপোষী নামক একটি দূর্গ নির্মাণ করেন। পরে রাজার সঙ্গে যুদ্ধ করে ভাইকে উদ্ধার এবং তার কন্যাকে বিয়ে করেন। ওই সময় গাজীর বিয়ে উপলক্ষে কেল্লাপোশী দুর্গে নিশান উড়িয়ে তিন দিনব্যাপী আনন্দ উৎসব করা হয়। গাজী মিয়ার সেই বিজয়কে ধরে রাখার জন্যই কেল্লাপোশীর মেলার আয়োজন করা হয়। আর তিথি অনুযায়ি ওই বিয়ের দিনটি ছিল জৈষ্ঠের দ্বিতীয় রোববার। সেই থেকে প্রতি বছর তিন দিনব্যাপি এ জামাইবরণ মেলা বসে।
নানা আয়োজনঃ মেলার এক সপ্তাহ আগে থেকে মেয়ে-জামাইকে দাওয়াত করে। মেলার কয়দিন মেয়ে-জামাইকে নানা উপহার, সেলামি দেয়া ছাড়াও সব ধরণের মিষ্টান্ন দিয়ে আপ্যায়ন করা হবে। সেই সেলামিসহ জামাই নিজের গচ্ছিত টাকা দিয়ে মেলা থেকে খাসি, বড় বড় মাছ, মহিষের মাংস, মাটির পাতিল ভর্তি মিষ্টান্ন ও রকমারি খেলনা কিনে আনেন। এ ছাড়া শ্যালক-শালিকাদের নিয়ে সারাদিন মেলায় ঘুরে বেড়ান তারা।মেলাকে ঘিরে থাকে সার্কাস, নাগোরদোলা, হুন্ডা, যাদু, পতুল নাচ খেলা দেখিয়ে দিনব্যাপি আনন্দ শেষে ছাতা, ছোটদের কাঠের ও ঝিনুকের তৈরি খেলনা সামগ্রী নিয়ে সন্ধ্যায় বাড়িতে ফেরেন। এছাড়া মাদার খেলা, লাঠিখেলা, যাত্রার অনুষ্ঠানও হয়ে থাকে। "মাদার খেলা"র "মাদার" নামের উৎপত্তি সম্পর্কে প্রচলিত আছে যে বহু আগে কিছু জটাধারিণী মহিলা ছিলেন যারা অন্যান্য সাধু সন্যাসীর সাথে মিলে মানুষের রোগমুক্তি করতেন। এদেরকে "মাদার" বলা হত। এভাবেই উৎসব উৎসাহের মধ্য দিয়ে জামাইমেলা বসে প্রতিবছর।
শেরপুর থানার ওসি বাবু কুমার শাহা বলেন, মেলাকে ঘিরে অশ্লিল নৃত্য ও জুয়া কোনভাবে চলতে দেওয়া হবে না। মানুষ সুন্দরভাবে যেন মেলার আনন্দ উপভোগ করে সেজন্য আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।